Best Places to Visit Near Kolkata - কলকাতার কাছাকাছি সেরা ১০টি বেড়ানোর জায়গা
অফিস- বাড়ি, বাড়ি-অফিস এর মাঝেই তুমুল অশান্তি, কোথায়? আপনার মনে। আর সে অশান্তি বলে অশান্তি, যাচ্ছেতাই অবস্থা, কাজ-কম্ম তো হচ্ছে নাই তার সাথে নাওয়া খাওয়াও ছুটি নিয়েছে। আর হবে নাই বা কেন? সারাজীবন বিভূতিভূষণ, শরৎ চন্দ্র নিদেন পক্ষে ফেলুদা পড়া মনটা কি আর, ওই অফিস এর চউখুপ্পির মধ্যে দিনের পর দিন কাটাতে পারে? দম তো বন্ধ হয়ে আসেই তার সাথে ছোট বেলা থেকে পুষে রাখা, ফেলুদা বা শ্রিকান্ত হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছে টাও হাত ছাড়া হওয়ার জোগাড় হয়। কিন্তু ইচ্ছে করলেই তো আর সব সম্ভব নয়। অফিস, কাজ, বস, তারা তোমায় ছাড়বে কেন?
Best Places to Visit Near Kolkata - কলকাতার কাছাকাছি সেরা ১০টি বেড়ানোর জায়গা
তবে শ্রীকান্তর মত বার্মা বা বিভূতিভূষণ এর মত ছোটনাগপুর না হলেও কাছা-কাছির মধ্যেই এই অফিস বাড়ির থোর-বোড়ি-খাড়ার থেকে ছুটি মিলতে পারে। কোথায় সেই ছুটি? কলকাতার কাছেপিঠে কিছু জায়গা যেখানে সপ্তাহান্তে কাটিয়ে আসতে পারেন এক-দু’দিন; নিশ্চিন্তে শহরের শোরগোল থেকে দুরে, সেরম কিছু জায়গায় হদিস (kolkata tourist guide) নিয়ে এলাম আমরা-
1. দীঘা (Digha)
আপনি যদি কলকাতার বাসিন্দা হন, তবে দীঘা আপনার ছুটিতে- ছুটিতে লেখা। হ্যাঁ, বাঙালী মাত্রেই ছট্টো-ছুটির ঠিকানা হল দীঘা। বঙ্গপোসাগরের তীরে অবস্থিত এই সৈকত শহর বাঙালীর আত্যন্ত প্রিয় একটি গন্তব্য। বন্ধু বান্ধব, পরিবার- পরিজন বা ভালবাসার মানুষটির সঙ্গে সমুদ্রের ধারে দুদিন ছুটি কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা এটি। কলকাতা থেকে বাস এ বা ট্রেনে দীঘা পৌছনো যায়, হাওড়া স্টেশন অথবা সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে দীঘা সুপার এসি এক্সপ্রেস, তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস বা কাণ্ডারি এক্সপ্রেস এ দীঘা যাওয়া যায়। এছারাও ধর্ম তলা বাস ডিপো থেকে দীঘা যাওয়ার বাস (kolkata to digha bus service) ও পাওয়া যায়, দুই ক্ষেত্রেই প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগে পৌঁছতে। স্টেশন থেকে টোটো বা ভ্যানে করে চলে যেতে হবে শহরের মধ্য ভাগে যেখানে আছে প্রচুর হোটেল ও হলিডে হোম। নিউ দীঘা ও ওল্ড দীঘা এই দুই ভাগে বিভক্ত শহর; অবশ্যই নতুন ভাগটির সৌন্দর্যায়ন পর্যটকদের পছন্দকে লক্ষ্য রেখে হওয়ার ফলে নিউ দীঘার জনপ্রিয়তা তুলনামুলক ভাবে বেশি, তবে অনেক বাঙালি এখনো ওল্ড দীঘাতেই থাকতে বেশি পছন্দ করেন। সমুদ্রের ধারে সুন্দর বাধানো বসার জায়গা, তার পাশে সারি দিয়ে ঝাউ বন আর বালির টিলা আর চেনা দীঘা সমুদ্র সৈকত সব মিলিয়ে একটা মায়াবী শান্ত সৌন্দর্য । কলকাতা থেকে মাত্র ৪ ঘণ্টা দুরে এই সৈকত শহর বরাবরই বাঙালি মনের খুব কাছের, দু’দিনের ছুটিতে ঘুরে আসার জন্য দীঘা একটি আদর্শ যায়গা।
2. মন্দারমনি (Mandarmani)
আপনি সমুদ্র ভালবাসেন? কিন্তু দিঘার হইচই, ভিড় ভাল লাগছেনা। সারা সপ্তাহের অফিস- যন্ত্রণার পর ব্যস্ততা আর শব্দ থেকে ছুটি চাইছেন? তবে দুদিনের ছুটিতে আপনি মন্দারমনি তে নিতে পারেন স্বস্তির নিস্বাস। শান্ত সমুদ্রের ধারে সবুজে ঘেরা শুসজ্জিত একাধিক রেসর্ট আর দীগন্ত বিস্তৃত সৈকত, সব মিলিয়ে শান্তির ঠিকানা। শান্ত বলে একঘেয়ে যাতে না হয় সে ব্যাপারেও নজর রেখেছেন ব্যবস্থাপকরা, অ্যাড্রিনালিন প্রেমিদের জন্যও আছে নানান অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস এর ব্যবস্থা- প্যরাগ্লাইডিং, স্পীড বোট ইত্যাদি। কলকাতা থেকে গাড়িতে ৪ ঘণ্টার পথ। সপ্তাহ শেষে বা দু-তিন দিনের ছুটিতে কাটিয়ে আসা যেতে পারে একান্তে কিছুটা সময়।
3. বিষ্ণুপুর (Bishnupur)
ছোটবেলায় আমাদের সবার বাড়িতেই প্রায় একটা- দুটো পোড়া মাটির পুতুল ছিল, যেগুলো আমাদের মায়েরা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখত আর আমরা বায়না করে পৃথিবী একদিকে করে ফেললেও সেই পুতুল নিয়ে খেলার অনুমতি কখনও ছিল না, সেই পোড়া মাটির পুতুলের দেশ, বিষ্ণুপুর, মল্লরাজাদের রাজধানি। মন্দির নগরি বললেও খুব ভুল হয় না। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন এ ৬ ঘণ্টার পথ বিষ্ণুপুর, ইতিহাস ভালবাসেন যারা বা পুরনো বাংলার স্থাপত্য ও শিল্পে আগ্রহী মানুষের জন্য বিষ্ণুপুর এক অবাক পৃথিবী। এখানকার টেরাকোটার কাজ, ও তার মন্দির এর রুপ- ঐশ্বর্য দেখতে সারা পৃথিবী থেকে জড়ো হয় মানুষ। ১৬০৭ সালে মল্লরাজ বিরহাম্বির তৈরি রাস মঞ্চ, দলমাদল কামান, জোড় বাংলোর মন্দির, ছিন্নমস্তার মন্দির, বালুচরি শাড়ি সব মিলিয়ে কলকাতা থেকে একটু দুরে এ যেন এক অন্য জগত যেখানে, এখনো রয়ে গেছে বর্গী হামলার গল্প আর রাজা-রাজরা দের বিলাসব্যসনের ছাপ। এই শহর আপনাকে এক লহমায় একবিংশ শতাব্দী থেকে নিয়ে যেতে পারে কেষ্ট- রাই, আর মদন মহনের আখড়ায়। শহুরে কংক্রিট জঙ্গলের মাঝে ক্লান্ত চোখে আরাম দেবে এই অপরূপ সমস্ত টেরাকোটার মন্দির, হাওড়া থেকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেসে পৌঁছে যাবেন এই অপরূপ লাল মাটির দেশে।
4. শান্তিনিকেতন (Shantiniketan)
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে খালি দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শিসের ওপর-
একটি শিশির বিন্দু।
কবির কথা মত আপনারও ঘর হতে দুই পা-র বেশি যাওয়ার যো নেই, গেলেই আফিস টেনে ধরবে পেছন থেকে আপনার রোজকার টাই টি দিয়ে। দুই দিন বা দুই পা, যাই হোক না কেন নিজের জন্য সময় যদি আপনার ওই দুই অঙ্কের গল্পেই সীমিত থাকে তাতে দুঃখের করার কিছু নেই। এই দুই অঙ্কের রাস্তা তো আমাদের কবিই দেখিয়ে গেছেন। শান্তিনিকেতন। হাতে দু-দিনের ছুটি, আর মাথায় দু-সপ্তাহের ব্যাথা, ছাড়াবার সহজ উপায়- হাওড়া থেকে বিশ্বভারতি এক্সপ্রেস বা বোলপুর এক্সপ্রেস ব্যাস; ৬ ঘণ্টায় সমস্ত যন্ত্রণার কাব্যিক সমাপ্তি। হ্যাঁ, কবিগুরুর সৌজন্য আর সৌন্দর্যের অনুভূতি আর মুঠো ভর্তি সুর-তাল-ছন্দ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ছোট্ট শহর। রবিন্দ্র নাথের বাসভবন, মিউজিয়াম, সোনাঝুরির হাট, খোয়াই, কোপাই নদী তো আছেই। এর সাথে কবি ও তাঁর শিষ্যদের বিভিন্ন উৎসব পৌষ মেলা, দোল উৎসব, রাখী উৎসব এই সমস্ত কিছুতে আরও রঙিন হয়ে ওঠে এই শহরের আনাচ-কানাচ। আপনার কেজো সাদা কালো মন টাকে লাল মাটির রঙে রাঙিয়ে দেবে শান্তিনিকেতন। শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গন একসাথে হয়ে নির্নিমেষে গেয়ে চলেছে এক চিরসবুজের গান , কম সময়ের জন্য পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য শান্তিনিকেতন অতুলনীয়।
5. বকখালি (Bakkhali)
সমুদ্র তীরে শান্তিতে কটা দিন কাটানোর এক অন্যতম সুন্দর ঠিকানা হল বকখালি। আদি-অন্ত হীন সৈকত, আর তুলনামূলক ভাবে শান্ত সমুদ্র। হেঁটে বেড়াতে পারেন সমুদ্রের পার ধরে, কিম্বা বসে থাকুন গম্ভীর জলরাশির সামনে; সৈকতের ওপরেই আছে অনেক ছোট ছোট দোকান, ফলে অনেক সময়ের জন্য থাকলেও চিন্তা নেই, খাবার বা চা এর ব্যাবস্থা আছে। এখানে সমুদ্রের কাছাকাছি অনেক হোটেল রিসর্ট আছে। এছাড়া হেনরিস আইল্যান্ড, জম্বু দ্বীপ, মোহনা এই সমস্ত জায়গায় ঘোরা যেতে পারে। জুলাই থেকে মার্চ মাস হল বক খালি যাওয়ার জন্য আদর্শ সময়। দিগন্ত বিস্তৃত সৈকত, বোট রাইড সমস্ত নিয়ে সারা সপ্তাহের স্ট্রেস কাটানোর এক অভাবনীয় পছন্দ বকখালি।
৬. শঙ্করপুর (Shankar Pur)
দিঘার ভিড় থেকে বাঁচতে আরও একটি পছন্দ হল শঙ্করপুর। দিঘার কাছেই এই জায়গা। দিঘার থেকে অনেক শান্ত ও ফাঁকা এই সৈকতে আপনি আপনার জীবনের সবথেকে সুন্দর সূর্যোদয় টি দেখতে পাবেন, প্রকৃতির রং , আর সমুদ্রের অবিরাম ঢেউ আপনার সমস্ত চিন্তা-ভাবনা কে শুদ্ধ পবিত্র করে তুলবে। জিবনের ক্রমাগত ব্যস্ততা ও ক্লান্তি কাটাবার জন্য শঙ্করপুর হতেই পারে আপনার গন্তব্য।
7. পুরুলিয়া (Purulia)
অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে লাল মাটির দেশ পুরুলিয়া, সপ্তাহান্তের গন্তব্য হিসেবে বহুদিন ধরে বাঙালির মনে বিরাজমান। বিভিন্ন ছোট ছোট পাহাড়, জঙ্গল, নদী। সাঁওতাল গ্রাম তাদের জীবন ধারা, লাল মাটির রাস্তা, বহু যুগ পুরনো বিভিন্ন মন্দির, ঝর্না ইত্যাদি সব নিয়ে পুরুলিয়া পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় বরাবরই প্রথম সারিতে। এখানে বিভিন্ন রকম রক ক্লাইম্বিং, ক্যাম্পিং ইত্যাদি হয়। এছাড়া সাঁওতাল, মুণ্ডা দের নাচ-গান, রান্না ইত্যাদিও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এছাড়া এখানকার ছৌ নাচ এর টানে সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকরা আসেন। লাল মাটি, সহজ- সরল মানুষ আর প্রকৃতির মাঝে কয়েকটা দিন ক্লান্ত শরীর কে আবার সজীব করে তুলবে। তবে অসম্ভব গরমের জন্য এখানে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল এই সময় টায় গেলে সবথেকে ভাল হয়। হাওড়া থেকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেসে ৬ ঘণ্টার পথ পুরুলিয়া। জীবনের ক্লান্তি কে লাল মাটির রুখু সরল স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে তুলবে।
8. মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)
বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দউল্লার রাজধানি মুকসুদাবাদ বা এখনকার মুর্শিদাবাদ আজও ইতিহাস যেখানে কথা বলে। ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা, হাজার দুয়ারি, ইমামবড়া, মদিনা মসজিদ, নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জার নিউ প্যালেস, ঘড়ি ঘর, বাচ্চেওয়ালি তোপ- কি নেই। সব একসাথে আপনার সামনে এনে দেবে এক হাজার বছর পুরনো ইতিহাস। ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদ কুলি খা-র তৈরি কাটরা মসজিদ, যেখানে রয়েছে তাঁর সমাধি। এছাড়াও মিরজাফর-এর সামাধি, সিরাজের সমাধি, ঘণ্টা ঘর; সব কিছু আপনাকে রোজকার একঘেয়েমি থেকে নিয়ে যাবে এক অন্য ভারত বর্ষে। এছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন পলাশীর যুদ্ধ প্রান্তর। ভাগীরথীর বুকে নৌবিহার আপনার মনে একে দেবে এক অবিস্মরণীয় ছবি। শিয়ালদা থেকে হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস বা ভাগীরথী এক্সপ্রেস; কিম্বা হাওড়া থেকে লালগোলা প্যাসেঞ্জারে যাওয়া যেতে পারে, সময় লাগে প্রায় ৫ ঘণ্টা। এখানে যাওয়ার সবথেকে মনরম সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস।
9. তাজপুর (Tajpur)
অফিসের কাজ, বাড়ির দায়িত্ব সমস্ত সামলাতে সামলাতে আপনি নিজেকে কখন যেন হারিয়ে ফেলেন, চারিদিকের শব্দ, চাহিদা থেকে অনেক দুরে শান্তির খোঁজ করলে আপনার জন্য তাজপুর হল বোধি বৃক্ষের মত। শহরের দ্রুততা, দূষণ আর ভিড় থেকে অনেক দুরে তাজপুরের সমুদ্র অনেক শান্ত, ও ফাঁকা। ঢেউ এর অনিবার্য আনাগোনা আর নির্নিমেষ শান্তির মধ্যে কটা দিন নিজের পরিবার বা একেবারেই শুধু নিজের সঙ্গে কাটিয়ে আসতে পারেন। পূর্ব মেদিনীপুরের অন্ত ভাগে এই সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে যাওয়ার আদর্শ সময় হল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী। শীতের ঠাণ্ডা হাওয়া আর অবিরাম ঢেউ আপনার ক্লান্ত মনকে দিতে পারে বহু অপেক্ষিত শান্তি।
10. মায়াপুর (Mayapur)
ভক্তি ভাব, আদর্শ, দর্শন ও সৌন্দর্য এই সব মিলিয়ে এক অপার বিস্ময়ের স্থান মায়াপুর। নামের সঙ্গে মিলে যায় স্থান মাহাত্ম। গঙ্গার তীরে শ্রী চৈতন্য দেবের ভুমি নবদ্বীপের এই মায়াপুর সঠিক অর্থেই মায়া-র-পুর। এখানে ইসকন এর মন্দির টি হল পর্যটক দের প্রধান আকর্ষণ। বিরাট এলাকা জুড়ে ফুল, ফলের বাগান, বিভিন্ন মন্দির, প্রার্থনা ঘর, অজস্র মানুষ, ভক্ত, বিদেশী, পূজারী সন্ত সব মিলিয়ে বিবিধের মাঝে এক মহান মিলন। এখানে এলেই বঝা যায় ‘আপন হতে বাহির হয়ে’ জগতের সাথে এক হওয়া কিভাবে যায়। এই বিশ্বাস সংসারের সাথে একাত্ম হওয়ার অনুভূতি দেয় এই মায়ানগরি। সারা বছর ই এখানে যাওয়া যায় তবে শীতকালে এই মন্দিরের সৌন্দর্য আর বেশি উপভোগ করা যায়।
অনেক অজানা জিনিস জানতে পারলাম। ভবিষ্যতে সুযোগ হলে বেড়িয়ে আসবো।🌹
ReplyDelete